রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৩২ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
জীবন সংগ্রামি লাইলার কম মূল্যের সবজির দোকান শিক্ষা কর্মকর্তার ঘুষ নেয়ার ভিডিও ভাইরাল মিয়ানমারে বিস্ফোরণে মুহুর্মুহু শব্দ, টেকনাফের বসত ঘরের আঙ্গিনায় এসে পড়েছে গুলি মাকে কুপিয়ে হত্যার পর থানা এসে হাজির যুবক টেকনাফ ছাড়াও এবার নতুন করে উখিয়া-নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে ভেসে আসছে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ চকরিয়ায় জেলা পরিষদের জমিতে নির্মিত আওয়ামী লীগের অফিস উচ্ছেদ সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটন নিয়ন্ত্রণ ও জাহাজ ছাড়ার পয়েন্ট নির্ধারণ সংক্রান্ত কমিটি গঠণ সব নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবিতে কক্সবাজার শহরে এসে সেন্টমার্টিন দ্বীপবাসির সড়ক অবরোধ পাহাড়ী আস্তানা থেকে মালয়েশিয়া পাচারকালে শিশুসহ ৩১ জন উদ্ধার, দুই দালাল আটক সাবের মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর পিএস ফিরোজ কক্সবাজারে গ্রেপ্তার

মাকের্ট নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কি মোনাফকে গুলি বা মেয়রের বিরুদ্ধে মামলা ?

বিশেষ প্রতিবেদক : কক্সবাজারে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা মোনাফ সিকদারকে গুলি করে হত্যা চেষ্টা এবং পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমানসহ ঘনিষ্টজনদের মামলায় আসামি করার জেরে পর্যটন শহর উত্তপ্ত হওয়ার নেপথ্যে ঘুরে ফিরে আলোচনায় এসেছে সমুদ্র সৈকতের নিকটবর্তী ‘ জায়গার মালিকানা ও তৎস্থিত একটি মাকের্ট নিয়ন্ত্রণের’।

যে মাকের্টটি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে গত ২/৩ বছর ধরে চলে আসছে বিবাদমান দুইটি পক্ষের নানা দ্বন্ধ-সংঘাত, আর পক্ষে বিপক্ষে একাধিক মামলা। জায়গাটি বিবাদমান উভয়পক্ষের মধ্যে কয়েকবার দখল-বেদখলের ঘটনাও ঘটেছে। এতে বিরোধীয় জায়গায় নির্মিত ওই মাকের্টের সামনেই গত ২৭ অক্টোবর রাতে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন ছাত্রলীগের সাবেক নেতা মোনাফ সিকদার। জায়গাটির নিয়ন্ত্রণ নিতে তৎপর একটি পক্ষের হয়ে সক্রিয় ছিলেন মোনাফও।

মোনাফকে হত্যা চেষ্টার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় প্রধান অভিযুক্ত করা হয়েছে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র মুজিবুর রহমানকে। যে মামলায় ২ নম্বর আসামী করা হয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজনীন সরওয়ার কাবেরীকে। মামলায় আসামি হিসেবে যে ৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তাতে মেয়র মুজিবের ব্যক্তিগত সহকারী আবু বকর সিদ্দিক খোকনের নাম রয়েছে তৃতীয় নম্বরে। এছাড়া মামলার অন্য সকল অভিযুক্তরাই ওই জমি সংক্রান্ত বিরোধের প্রতিপক্ষ।

আর বিরোধীয় জায়গায় নির্মিত মার্কেটটির সামনেই মোনাফকে গুলি করে হত্যা চেষ্টার ঘটনা ঘটেছে। তাতেই আইন-শৃংখলা বাহিনীসহ সচেতন মহলের মাঝে একটি প্রশ্নের ঘুরপাক খাচ্ছে- পুরো ঘটনাটি কি তাহলে ওই জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে সংগঠিত হয়েছে নাকি জমির বিরোধকে কেন্দ্র করে সুবিধা নিতে স্বার্থন্বেষী তৃতীয় পক্ষের অন্তরালে তৎপরতায় এই মামলা? এ নিয়ে এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে মাঠে নেমেছে পুলিশসহ আইন-শৃংখলা বাহিনীর সংশ্লিষ্টরা।

পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে মোনাফকে গুলি করে পালিয়ে যাওয়া দূর্বৃত্তদের সিসিটিভি ফুটেজও হাতে পেয়েছে পুলিশ। ফুটেজে গুলি করা দূর্বৃত্তকে শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হলে ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হবে বলে ধারণা পুলিশের।

যদিও মামলার বাদী ও গুলিতে আহত মোনাফের বড় ভাই শাহজাহান সিকদারের ভাষ্য, একটি জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে মেয়র মুজিবুর রহমানের নির্দেশে দূর্বৃত্তরা তার ভাইকে গুলি করে হত্যার চেষ্টা চালিয়েছে। জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজনীন সরওয়ার কাবেরীসহ মামলার অন্য আসামিরাও এই জমির বিরোধে প্রতিপক্ষের সঙ্গে জড়িত।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, সমুদ্র সৈকত সংলগ্ন হোটেল-মোটেল জোনের সুগন্ধ পয়েন্টের আলোচিত এই জমির প্রকৃত মালিক চকরিয়া উপজেলার পূর্ব বড় ভেওলা এলাকার ওমর মিয়ার স্ত্রী সায়রা খাতুন। সেখানে আরএস খতিয়ানমূলে তার মালিকানাধীন ১ একর ১০ শতক জমি রয়েছে। সায়রা খাতুন জীবিত থাকা অবস্থায় পণমূল্যে এই জমিটি ক্রয় সূত্রে ভোগদখলে ছিলেন মহেশখালী উপজেলার গোরকঘাটা এলাকার ডা. নুরুল আমিন সিদ্কিীর ছেলে আতাউল্লাহ সিদ্দিকী। কিন্তু সায়রা খাতুনের মৃত্যুর পর গত ২/৩ বছর ধরে জায়গার মালিকানা নিয়ে বিরোধের সৃষ্টি হয়।

গত বছর-দেড়েক আগে ওই জমিটি সায়রা খাতুনের ছেলেদের কাছ থেকে কিনেছেন দাবি করে আসছিল জনৈক ওবাইদুল হোছাইন নামের এক ব্যক্তি। এতে জমিটি দখলে নিতে শুরু হয় নানা তৎপরতা। এ নিয়ে ওবাইদুল হোছাইন আদালতে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করেন। পরে ওবাইদুল হোছাইন জমিটি দখলে নিতে ব্যবহার করে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা মোনাফ সিকদার ও তার লোকজনকে। এক পর্যায়ে জমিটি তারা দখলেও নিয়ে নেয়।

জমি থেকে উচ্ছেদ হওয়ার পর ঘটনার ব্যাপারে ডা. নুরুল আমিন সিদ্দিকী ও তার ছেলে আতাউল্লাহ সিদ্দিকী পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমানের কাছে বিচারপ্রার্থী হন। পরে তিনি (মুজিবুর) জমির মালিকানা নিয়ে বিবাদমান ঊভয়পক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেন। কিন্তু বৈঠকে মেয়রের দেয়া সিদ্ধান্ত মানতে রাজী হননি ওবাইদুল হোছাইন ও মোনাফ সিকদার। এ নিয়ে তাদের (ওবাইদুল ও মোনাফ ) ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন মেয়র। এতে জমির মালিকানা ও মার্কেট নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নতুন করে শুরু হয় দ্বন্ধ-সংঘাতের। আর পরবর্তীতে বিভিন্ন ঘটনায় বিবাদমান উভয়পক্ষ আদালতে মামলা পাল্টা-মামলাও দায়ের করে।

সরেজমিন দেখা যায়, কলাতলীর সুগন্ধা পয়েন্টের উত্তর পাশে আড়াআড়িভাবে তৈরি করা হয়েছে দুইটি শুঁটকি মার্কেট। মার্কেট দু’টিতে দোকান রয়েছে ৩৪টি। আর দোকানগুলোর মালিকানা নিয়েও রয়েছে নানা আলোচনা। মার্কেটের মালিক একজন হলেও এসব দোকানের মালিকানা দাবি করে ভাড়া আদায় করছেন একেকজন। কোন কোন দোকান থেকে মাসিক ভাড়া আদায় করেন ওবাদুল ও মোনাফ সহ ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তি। মার্কেকটির ৩৪ দোকান থেকে অনন্ত ১৮ জন ব্যক্তি মালিক হিসেবে ভাড়া আদায় করার তথ্য পাওয়া গেছে। ভাড়া আদায়কারি এসব ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধি ও সাংবাদিক সহ বিভিন্ন জনের নাম পাওয়া গেছে।

মালিকানা নিয়ে বিরোধীয় জায়গার উপর নির্মিত ওই মার্কেটটির সামনে গত ২৭ অক্টোবর রাতে দূর্বৃত্তদের হাতে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর মোনাফ সিকদারকে ভর্তি করা হয় কক্সবাজার সদর হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসা নেওয়ার সময় ঘটনার ব্যাপারে আহত মোনাফ সিকদারের বক্তব্যের একটি ভিডিও রেকর্ড করেন কেউ একজন। ভিডিও চিত্রে মোনাফ বলতে শোনা যায় বলেন, “ মেয়র মুজিবের সঙ্গে লেগেছি কেন জানতে চেয়ে আমাকে এক দূর্বৃত্ত গুলি করেছে। ”

তবে এ নিয়ে মেয়র মুজিবুর রহমান দাবি করেছেন, “ মোনাফ সিকদারকে যেদিন গুলি করা হয় সেদিন আমি ঢাকায় ছিলাম। দলের অভ্যন্তরে থাকা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ইন্ধনে ঘটনায় জড়িয়ে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আমাকে মামলায় আসামি করা হয়েছে। ”

কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি শেখ মুনীর-উল-গীয়াস বলেন, মোনাফ সিকদারকে গুলি করার ঘটনায় কারা জড়িত আমরা তদন্ত করে দেখছি। অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে এই মামলা তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন তৈরী করে আদালতে জমা দেয়া হবে।

এদিকে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা মোনাফ সিকদারকে গুলি করে হত্যা চেষ্টার ঘটনায় ৩১ অক্টোবর বিকালে মামলা নথিভূক্ত হওয়ার পরপরই জেলা শহরের প্রধান সড়ক অবরোধসহ বিভিন্ন উপজেলায়ও বিক্ষোভ হয়েছে। পরদিন কক্সবাজার পৌর পরিষদের প্রতিবাদ কর্মসূচী হিসেবে সেবা কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়। যদিও দুপুরের পর থেকে তা পুনরায় চালু হয়। এরপরও ঘটনার জেরে বিরাজ করছে উত্তপ্ত পরিস্থিতি।

এ রকম পরিস্থিতিতে মোনাফকে গুলি করে হত্যা চেষ্টার ঘটনাটি জমির বিরোধ নিয়ে ঘটেছে নাকি এই বিরোধকে কাজে লাগিয়ে তৃতীয় কোন পক্ষ ভিন্ন স্বার্থ আদায়ের জন্য দূর্বৃত্তদের ব্যবহার করেছে- এ ধরণের প্রশ্নের ঘুরপাক খাচ্ছে আইন-শৃংখলা বাহিনীসহ সচেতন মহলে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

.coxsbazartimes.com

Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themesbcox1716222888